পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ট্রেনে খুলনা হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বাসে বাগেরহাটে আসেন পর্যটক সিরাজুল ইসলাম। মাজার ও ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখে আজ শুক্রবার রাতেই তাঁর ঈশ্বরদীতে ফিরে যাওয়ার কথা। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় যেতে পারছেন না।
তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাধ্য হয়ে আবার এক দিন হোটেলে থাকতে হবে। রাজনীতির মারপ্যাঁচে আমরা ভোগান্তিতে পড়েছি। এ কারণে ভ্রমণের খরচও বেড়েছে অনেক।’
মালিক সমিতির ডাকা ‘পরিবহন ধর্মঘট’-এ বাগেরহাট থেকে খুলনাসহ সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ থাকায় এ ভোগান্তিতে পড়েন তিনি।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাধা দেওয়া হচ্ছে ভ্যান, ইজিবাইকসহ ছোট যানবাহন চলাচলেও। সকালে হোটেল থেকে বেরিয়ে খানজাহান আলীর মাজারে যেতে গিয়ে বিড়ম্বনার শুরু। বাসস্ট্যান্ডেই আমাদের ইজিবাইকে দাঁড় করানো হয়। এরপর দর্শনার্থীসহ আরও দুটি স্থানে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।’
আগামীকাল শনিবার খুলনা মহানগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিভাগীয় গণসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। এ সমাবেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের আসা বাধাগ্রস্ত করতে খুলনা জেলা বাসমালিক সমিতি ২১ ও ২২ অক্টোবর ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বলে অভিযোগ দলটির।
কয়েকজন দর্শনার্থীর সঙ্গে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে পর্যটকদের হয়রানি না করার দাবি জানিয়ে তাঁরা বলেন, মোড়ে মোড়ে লাঠি হাতে অবস্থান নিয়েছেন পরিবহনকর্মীরা। ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলেও পথে পথে তাঁরা থামাচ্ছেন। তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়ে আসতে হয়েছে।
এভাবে জেলার বিভিন্ন স্থানে যানবাহন চলাচলে বাঁধা দেওয়া হয়। বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায়
এভাবে জেলার বিভিন্ন স্থানে যানবাহন চলাচলে বাঁধা দেওয়া হয়। বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় ছবি: ইনজামামুল হক
এদিকে ধর্মঘটের কারণে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ, খান জাহানআলীর মাজার ও সুন্দরবনে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। শুক্র ও শনিবার এসব স্থানে দর্শনার্থীর চাপ থাকে অনেক বেশি। তবে ধর্মঘটের কারণে আজ শুক্রবার ষাটগম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবনে স্বাভাবিকের তুলনায় অর্ধেকে নেমেছে দর্শনার্থীদের সংখ্যা। যাঁরা এসেছেন, তাঁরাও ফিরতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অনেকে বাধ্য হয়ে বাগেরহাটে অবস্থান করছেন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক শুক্রবার ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল তিন হাজারের বেশি। তবে আজ এখানে দর্শনার্থী ছিলেন দেড় হাজার জনের কম।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, আজ সেখানে ৪৫০-এর মতো দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। তবে আগের দুই শুক্রবার এ সংখ্যা ছিল হাজারের ওপরে।
ভ্যান ও মোটরসাইকেল চালকদেরও আটকান পরিবহন শ্রমিকেরা। বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায়
ভ্যান ও মোটরসাইকেল চালকদেরও আটকান পরিবহন শ্রমিকেরা। বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় ছবি: ইনজামামুল হক
খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতি থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সড়ক ও মহাসড়কে অবৈধভাবে নছিমন, করিমন, মাহিন্দ্র, ইজিবাইক ও বিআরটিসির গাড়ি চলাচল করছে। ২০ অক্টোবরের মধ্যে প্রশাসন যদি সড়কে এসব অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ না করে, তাহলে পরবর্তী দুই দিন (২১ ও ২২ অক্টোবর) জেলার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হবে।
বাগেরহাট আন্তজেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তালুকদার আবদুল বাকি বলেন, মহাসড়কে মাহিন্দ্র, ইজিবাইকসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের দাবিতে মালিক-শ্রমিকেরা অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট পালন করছেন।
ঢাকা থেকে পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে নিজের গাড়িতে বাগেরহাটে ঘুরতে এসেছেন ব্যবসায়ী শামীম হাসান। ভোরে আসার পথে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে বিকেলে ষাটগম্বুজ মসজিদ থেকে বেরিয়ে রাস্তার অবস্থা দেখে দুশ্চিন্তায় পড়ে পরিবারটি।
একই অবস্থা বাগেরহাটে ঘুরতে আসা সব পর্যটকেরই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ষাটগম্বুজ ও সুন্দরবনে আশা দর্শনার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। ট্যুরিস্ট স্পটের বাইরে সড়ক-মহাসড়কে হয়রানির বিষয়টি আমাদের জানা নেই।’